২৫ শে সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

রাকেশ রায়হান, ছাত্র।। সারা পৃথিবী বর্তমানে যে কঠিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা হল করোনাভাইরাস মহামারী। আর এই সমস্যার সমাধান নিয়ে যারা কাজ করছেন অর্থাৎ ভ্যাক্সিন কিংবা এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারে যে মানুষগুলো দিন রাত পরিশ্রম করছেন তাদের মধ্যে ফার্মাসিস্টের ভুমিকা অন্যতম। যেকোন রোগের প্রতিষেধক তৈরীতে তারা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এই অবদানকে সারা বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরতে এবং তাদের পেশাকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর ২৫ শে সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস হিসেবে উদর্যাপন করা হয়। ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনের উদ্দ্যোগে অন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্ব পালন করা হয়ে থাকে।
”Transforming Global Health বা পরিবর্তিত বিশ্ব স্বাস্থ্য” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই বছর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারনে বিশ্ব স্বাস্থ্য আজকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করতে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনেছি নানা ধরনের পরিবর্তন। নিজেদের এবং নিজেদের পরিবার পরিজনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা মেনে চলছি নানা নিয়ম কানুন। এই সবকিছুকেই একত্রে আমরা বলছি “নিউ নরমাল”। এই সমস্যার মধ্যে যখন পুরো বিশ্বের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো প্রায় অচল, ঠিক তখনি মানুষের প্রয়োজনীয় সকল ওষুধ প্রস্তুত, বিপনন এবং বাজারজাতকরনে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ফার্মাসিস্টরা। যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে এবন একই সাথে পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিবছর অনেক জাকজমকপূর্ণ দিনটি পালন করা হলেও করোনা মহামারীর কারনে এই বছরে দিনটির সকল আনুষ্ঠানিকতা অনলাইনেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশেও দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করা হয়। বিশেষ করে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ রয়েছে, সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সেমিনার, র্যালি, অলিম্পিয়ার্ড, রক্তদান কর্মসূচি সহ নানা ধরনের সামাজিক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান। তবে এইবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকায় ফার্মাসিস্টদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ক্লাব গুলো অনলাইনেই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এরমধ্যে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা নিয়ে একাধিক ওয়েবিনার এবং অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা এই সংগঠন গুলো আয়োজন করেছে।
উন্নত দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফার্মাসিস্টরা যে ধরনের ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশে তার কিছুটা ব্যাতিক্রম দেখা যায়। যেমন এই দেশে অল্প কিছু বেসরকারি হাসপাতাল বাদে কোথাও ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ নেই। যা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের একটি নেতিবাচক দিক। ফার্মাসিস্টদের কাজ শুধু ওষুধ প্রস্তুত করা নয়, তাদের কাজ এটাও যে রোগীকে সেই ওষুধ গ্রহনের পদ্ধতিসহ যাবতীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করা। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ রোগীই এই সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। যার অন্যতম ফলাফল হল ক্রমবর্ধমান ড্রাগ রেজিসটেন্স। এছাড়াও ওষুধ সংক্রান্ত নানা ধরনের জটিলতা বর্তমানে রোগীদের মধ্যে প্রবল আকার ধারন করতে দেখা যায়। যা একজন ফার্মাসিস্টের দিক নির্দেশনায় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকার ইতোমধ্যে হাসপাতাল গুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগসহ মডেল ফার্মেসীর প্রসারে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এদেশের মানুষ যার সুফল লাভ করতে পারবে।
লেখকের ইমেইলঃ rakeshraihan13@gmail.com