১৫ লাখ পরিবার পাচ্ছে না নগদ সহায়তা
বার্তাবহ চাঁদপুর ডেস্ক: করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু তারা সবাই এ সুবিধা পাচ্ছে না। তালিকায় গরমিল ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন বিবেচনা করে এ সহায়তা ওই ১৫ লাখ পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ করা টাকা ফেরত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। দেশে দরিদ্রদের কোনো তালিকা না থাকায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দ্রুত তালিকা তৈরি করে ঈদুল ফিতরের আগেই এ টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই টাকা বিতরণ করার দায়িত্বে ছিল। এ পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার জনকে তাদের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সমকালকে বলেন, আপাতত এই টাকা বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত
হয়েছে। তালিকায় অনেক সমস্যা ছিল এবং বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, এ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহাও চলে গেছে। তালিকাভুক্তদের ভুল সংশোধন করা, তালিকা থেকে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মাঠ প্রশাসনের দুর্বলতায় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে সহায়তার অর্থ না দিয়েই এ কর্মসূচি থেকে সরে যাচ্ছে সরকার। ঈদুল ফিতরের আগে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ নামে দরিদ্রদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নেয় সরকার। এ জন্য এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। বাকি ১৫ লাখ পরিবারের জন্য বরাদ্দ অর্থ বিতরণ না করায় তা ফেরত যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।
দেশে সাধারণ ছুটি শুরুর আগের দিন, গত ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের কারণে দরিদ্রদের নগদ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু শুরুতেই সমস্যা দেখা দেয় দরিদ্রদের তালিকা নিয়ে। তখন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে দরিদ্রদের তালিকা করার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দরিদ্রদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন, তখনও পুরো ৫০ লাখের তালিকা সম্পন্ন করতে পারেনি প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রশ্ন ওঠে তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে। ভোটার আইডি ডাটাবেজ, সরকারি চাকরিজীবীদের ডাটাবেজ, পেনশনার ডাটাবেজের তথ্যসহ সরকারের ১১টি তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়, সরকারি চাকরিজীবী, পেনশনভোগী, সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন এ তালিকায়। দরিদ্রদের তালিকায় শতাধিক ব্যক্তির নামে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অর্থ আত্মাসাৎ করার চেষ্টার অভিযোগও পাওয়া যায়। এ ছাড়া, মোবাইল নম্বর নিবন্ধিত না হওয়া, মোবাইল নম্বর ভুল হওয়ার তথ্যও মেলে। ফলে ঈদুল ফিতরের আগে সহায়তা দিতে পারেনি সরকার। তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বেশকিছু জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলার পর গ্রেপ্তার করে সরকার।
ঈদুল ফিতরের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, চাকরিজীবী, পেনশনার, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী ও সরকারের অন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা প্রণয়ন করা হবে। আর মোবাইল ফোন নম্বরে ভুল, অনিবন্ধিত নম্বরগুলো সংশোধন করে পাঠাতে স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়। যাদের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নেই, তাদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ আর সফল হয়নি।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল সনাতন পদ্ধতির। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তালিকা করে দেবে, তারপর বিতরণ। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরাসরি মানুষ তালিকাভুক্ত হতে পারে এমন প্রক্রিয়া বা পুরো জনগোষ্ঠীর তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। যেখানে প্রয়োজনে যাচাই করাও যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি শুধু পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণে।