নোয়াখালীর ঘটনায় ক্রসফায়ার চাওয়া ঠিক না
বার্তাবহ চাঁদপুর ডেস্ক: বেগমগঞ্জের ঘটনায় অপরাধীদের ক্রসফায়ার হউক- আমি তার তুমুল বিরোধীতা করি। আমি চাই তাদের বিচার হউক, কিন্তু ক্রসফায়ারের নামে বিচারহীনভাবে খুন করে ফেলা হউক সেটা আমি চাই না।
বেগমগঞ্জের নারী নিপীড়কদের ক্রসফায়ারে দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই দাবি জানাতে দেখেছি। তাদের অনুভূতির প্রতি আমার সম্মান আছে। কিন্তু তাদের এই চাওয়ার সাথে আমার প্রবল দ্বিমত আছে। কেন দ্বিমত সেই কথা বলি।
জাতীয় সংসদে কোনো কোনো এমপিও ক্রসফায়ারের দাবি তুলেছিলেন।এমপি সাহেবরা আইন প্রণেতা, তারা দেশের জন্য, নাগরিকদের জন্য আইন প্রণয়ন করেন। তারা কেন বেআইনি পদক্ষেপ চান! তাও আবার আইন প্রণয়নের জন্য তৈরি সংসদ ভবনে দাড়িয়ে!
এতে যে সংসদের অবমাননা হয়- সেটি কি তারা বুঝতে পারছিলেন না? না, কেউ তাদের বলেনি এটি সংসদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ, অবমাননা। স্পিকারও বলেননি। কারন তারা এমন একটি বেআইনি চর্চ্যা চান নিজেদের সুবিধার জন্য, নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য।দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারার ব্যর্থতা থেকে নাগরিকদের দৃষ্টি
অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখার জন্য।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ যখন ক্রসফায়ার চান- তখনো তার উদ্দেশ্যটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বার্থবাদী রাজনীতিকরা নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহারের জন্য বেআইনি ব্যবস্থা সবসময়ই বহাল রাখতে তৎপর থাকে।
কোনো সম্পাদক- কলাম লেখক যখন ক্রসফায়ারের দাবি তুলেন-তখন তাকে আমার ধান্ধাবাজ মনে হয়। স্বার্থবাদী রাজনীতিকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের তরিকা হিসেবে ধান্ধাবাজ সম্পাদক- কলাম লেখকরা ক্রসফায়ারের পক্ষে সরব থাকেন।
কোনো সাংবাদিক, রিপোর্টার যখন ক্রসফায়ারের পক্ষে কথা বলেন- তখন খানিকটা চিন্তিত হতে হয়। এই সাংবাদিক, রিপোর্টারের তো বিচারটা যাতে নিম্চিত হয় সে জন্য সরব থাকার কথা, তারা কেন বেআইনি ক্রসফায়ারের পক্ষে কথা বলবেন!
স্বার্থবাদী রাজনীতিকরাও চায় আপনি ক্রসফায়ারের পক্ষে কথা বলেন। এতে তাদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। বিচার ব্যবস্থাকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দিতে হয় না, বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হয় না, কার কি দায় সেইগুলো নিয়ে কথা বলতে হয় না।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে প্রশাসন কী ঘুমিয়ে আছে: ফরিদা ইয়াসমিন
রাস্তা থেকে কাউকে ধরে কিংবা ঘটনায় জড়িত দু একজনকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিলেই আমরা খুশি হয়ে যাই। কিন্তু সিস্টেম ঠিক না হলে, বিচার ব্যবস্থাকে নিজের পায়ে দাড়াতে না দিলে যে সমস্যার সমাধান হয় না- সেটা আমরা বুঝতে চাই না। আর স্বার্থবাদী রাজনীতিকরা বেআিইনি ক্রসফায়ারের অস্ত্রটাকে সুবিধামতো ব্যবহারের জন্য তুলে রাখতে পারে।
তাই বলি, ক্রসফায়ারের দাবি একদমই তুলবেন না। বরং বিচার চান। থানা পুলিশ যাতে সৎভাবে, যথাযথভাবে চার্জশিট দেয়, টাকা খেয়ে ফাঁক ফোকর না রাখে তার জন্য চাপ দেন।রাষ্ট্র, সরকার যাতে সক্রিয় থাকে, কার্যকর থাকে সেটা যেনো দৃশ্যমান হয়।
রাষ্ট্র, সরকার সক্রিয় না থাকলে দু একটা ক্রসফায়ারে ধর্ষন বন্ধ হবে না। এর আগে কয়েক ধর্ষকের ক্রসফায়ার হয়েছে। তাতে কি সিলেটের ঘটনা, বেগম গঞ্জের ঘটনা থেমে থেকেছে! থাকেনি। তাই ক্রসফায়ারের দাবি নয়, বরং সরকার, রাষ্ট্রকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি তুলুন।