১২ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ থাকবে বাজারে
বার্তাবহ চাঁদপুর ডেস্ক: দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। চাহিদাও প্রায় সমান। তবে সংরক্ষণ আর প্রক্রিয়াকরণে নষ্ট হয় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন, যা বার্ষিক ঘাটতিতে পরিণত হয়। এ ঘাটতি পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী ভারত থেকে। এ বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশে এক লাফে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ টাকায় উঠে যায়। যদিও পরবর্তী সময় দাম কিছুটা কমে।
বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছি আমরা। যার অন্যতম দেশীয় পেঁয়াজ সরবরাহ ঠিক রাখা। এ জন্য আমি নিজেও পেঁয়াজ উৎপাদিত অঞ্চলগুলোতে সফর করেছি। ওখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই তৎপর স্থানীয় পেঁয়াজের সরবরাহ যেন সচল থাকে। পেঁয়াজ আমদানিও শুরু হয়ে গেছে। টিসিবির মাধ্যমে কিছু বড় ব্যবসায়ীদের দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তাঁরা আগামী মার্চের মধ্যে প্রায় দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। এগুলো বিক্রি হবে টিসিবির মাধ্যমে। বেসরকারিভাবে আরো চার থেকে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আসছে। প্রতিদিনই আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে ঢুকছে।’
বাণিজ্যসচিব বলেন, “এবার প্রথমবার পেঁয়াজ ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ই-কমার্সের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা বাজার নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করছে। এ ছাড়া টিসিবির ‘ট্রাক সেল’ থাকছে। আমাদের সাপ্লাই চেইনে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ আছে। এগুলো দিয়ে এখনো আগামী দুই মাস চলবে। প্রতিদিন বাজার তদারকি হচ্ছে। সারা দেশে ১০০ থেকে ৫০০ টিম তদারকিতে কাজ করছে। প্রচুর শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে এক দিনেই ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যদি কেউ আবার বাজার অস্থির করার চেষ্টা করে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, ‘মাসে এক লাখ ৮০ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আগামী মৌসুম পর্যন্ত আমাদের কাছে সময় আছে ছয় মাস। আমাদের হিসাবে এই ছয় মাসে দেশি এবং আমদানি মিলে ১২ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ থাকবে বাজারে।’
এবারের সংকট প্রসঙ্গে ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘এবার করোনার কারণে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যস্ত ছিল। আমরাও ব্যস্ত ছিলাম। এ ছাড়া রোজার মাস ছিল। ফলে পরিবেশটা অনুকূলে না থাকায় সংকট হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের সংকট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে পেঁয়াজ চাষে জমির আওতা বাড়ানো হবে। সরকারিভাবে কৃষকদের বীজ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে পেঁয়াজের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারের অর্থ বিভাগের সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব। এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ও মাঠে নেমেছে। তারা বীজ আমদানি করছে। কৃষকের কাছে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ বাড়াবে।’
এ অভিজ্ঞ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের আট জেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ হয়। এসব জেলায় যদি ১০ শতাংশ হারে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো যায়। ভালো বীজ সরবরাহ করা যায় এবং কৃষকদের ঋণ দেওয়া যায়, তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।’
বড় ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিলেও প্রয়োজনের সময় বাজারে পণ্য আসে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘প্রথম বছর পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিশেষায়িত জাহাজের খোঁজ পেতেই আমাদের অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। কারণ পেঁয়াজের জন্য বিশেষায়িত কনটেইনার লাগে। এটা আমাদের আগে জানা ছিল না। তবে এ বছর আগের সমস্যা নেই। এরই মধ্যে পেঁয়াজ জাহাজে উঠে গেছে। এস আলম গ্রুপ ২২ হাজার টন পেঁয়াজের ঋণপত্র খুলেছে। মেঘনা গ্রুপ সাত হাজার ৫০০ টন, সিটি গ্রুপ তিন হাজার ৭২০ টন, বিএসএম তিন হাজার ৪৪৬ টন, টি কে গ্রুপ তিন হাজার টন এবং টিসিবি তিন হাজার টন। সব মিলিয়ে ৪২ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে।’
জাফর উদ্দিন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে জনবল বাড়ানোসহ টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ট্রাক বিক্রি বাড়ানো হচ্ছে, ই-কমার্সকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে সক্ষমতা অন্যবারের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। গুদাম ভাড়া নিয়ে এর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ ১৫ থেকে ২০ হাজার টনের হয়তো সংরক্ষণ ব্যবস্থা আছে। রাখি পেঁয়াজের জন্য দুই হাজার টনের ব্যবস্থা ছিল। এটাকে আমরা ২০ হাজার টনে পরিণত করেছি।’
Pingback: সিঙ্গাপুর থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার