যৌন নিপীড়নের ২৩ বছর পর অভিযোগ, গৃহশিক্ষক আটক
বার্তাবহ চাঁদপুর ডেস্ক: গৃহশিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েও বয়স কম থাকায় সঙ্কোচে এ ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলতে পারেননি এক নারী। ২৩ বছর পর সেই কিশোরী এখন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী।
ভারতের শিলিগুড়ি ছেড়ে কর্মসূত্রে থাকেন হংকংয়ে। কিন্তু, মাঝখানের এতগুলো বছরেও ভুলতে পারেননি কিশোরীকালের অসহনীয় দিনগুলো।
নিজের মনের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন যন্ত্রণা। ২৩ বছর আগের সেই যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত গৃহশিক্ষককে শেষ পর্যন্ত জেলে ঢোকালেন তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তি এখন স্কুল শিক্ষক হয়ে গেছেন।
২৩ বছর আগে যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর বয়স এখন ৩৭ বছর। পেশায় আইনজীবী ওই নারীর অভিযোগ, এতগুলো বছর পরেও একই রকম আছেন ওই শিক্ষক। নিজেকে এতটুকু শোধরানোর চেষ্টা করেননি। ছোট মেয়েরা অতীতের অভ্যাস মতোই তার যৌন লালসার শিকার হচ্ছিল। এটা জানার পর আর চুপ থাকতে পারিনি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করি। যার ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
অভিযোগ অবশ্য এরা আগেই করেছিলেন তিনি। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ২০১৯ সালেই গৃহশিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেছিলেন হংকংবাসী ওই নারী আইনজীবী।
অভিযোগপত্রে তিনি জানান, তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। দার্জিলিঙের বাড়িতে গৃহশিক্ষক তাকে পড়াতেন। সেই সময় তিনি ওই শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
পুলিশ বলছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই শিলিগুড়ি থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খবরটি জেনে ওই নারী বলেছেন, এখনো অনেকটা পথ চলা বাকি। এটা সবে ছোট্ট একটা জয়। অভিযুক্তের জামিনের আবেদন আদালতে খারিজ হয়েছে। পুলিশ উনার বিরুদ্ধে কড়া মামলা দিয়েছে। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে কেন ২৩ বছর লেগে গেল? এর জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে একই সঙ্গে ভীত ও বিভ্রান্ত ছিলাম। কিশোরী বয়সে ওই ট্রমার মোকাবিলা কী করে করব, সে উপায় জানা ছিল না।
তার কথায়, যৌন নির্যাতন বিশদ জানানো একটা মেয়ের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। কিন্তু, আমার কানে যখন এলো ওই শিক্ষক এখন শিলিগুড়িতে রয়েছেন, সেখানে বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের অতীতের অভ্যেস মতো যৌন নিপীড়ন করছেন, আর চুপচাপ থাকতে পারলাম না। সব দ্বিধা কাটিয়ে দার্জিলিং পুলিশের দ্বারস্থ হলাম।
ওই নারী আইনজীবীর স্বীকারোক্তি, নিজের অতীতের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে এখনো তার সঙ্কোচ হয়। তিনি বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার নিপীড়নের শিকার হয়েছি। আজও দুঃস্বপ্নের মতো সে ঘটনা তাড়া করে। আমি চাই না, আরো কোনো বাচ্চাকে সেই ট্রমার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হোক। তাই এতগুলো বছর পর আমি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হয়েছি।
দার্জিলিঙের ডেপুটি পুলিশ সুপার (শহর) রাহুল পান্ডে জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ পদক্ষেপ নেয়। অক্টোবরের গোড়াতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন শিলিগুড়ির একটি স্কুলের ওই শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তারা প্রমাণ জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন পর্যন্ত চারজন ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।
প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত রসায়নের শিক্ষক গত ২০ বছরে কমপক্ষে পাঁচটি স্কুলে চাকরি করেছেন। এক স্কুলে বেশিদিন থাকেন না। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার জানান, ধৃত শিক্ষককে আদালতে পেশ করা হলে, ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের দাবি।